, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ , ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


ঘুষের টাকা গোনা হচ্ছিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তার রুমে, ভিডিও ভাইরাল

  • আপলোড সময় : ২৬-১০-২০২৩ ০৩:০০:২১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-১০-২০২৩ ০৩:০০:২১ অপরাহ্ন
ঘুষের টাকা গোনা হচ্ছিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তার রুমে, ভিডিও ভাইরাল ছবি: সংগৃহীত
বরগুনার বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্করের কক্ষে ফার্মাসিস্ট কৃষ্ণ কুমার পালের টাকা গণনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গণনা করা টাকা ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলার সিভিল সার্জন। 

ফার্মাসিস্ট কৃষ্ণ কুমার টাকা গণনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবি, ঘুষ লেনদেনের মতো কিছু ঘটেনি। 

গত মঙ্গলবার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। ৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রেজাউল ইসলাম মামুন খান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কক্ষে ঢোকেন। পরে তাদের দুজনের মধ্যে কথোপকথন হয়।

একপর্যায়ে ফার্মাসিষ্ট কৃষ্ণ কুমার পালকে কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তিনি মামুন খানের কাছে থেকে টাকার একটি বান্ডিল নেন। পরে তা গুনে দেখেন।
রেজাউল ইসলাম মামুন খানের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পথ্য ও ষ্টেশনারি সরবরাহ করে আসছেন।

বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর বিল নিয়ে প্রায়ই হয়রানি করেন। মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। গত ছয়মাস বিলের কাগজে স্বাক্ষর দেননি। বিল তুলতে না পেরে বাধ্য হয়ে তাঁর (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) প্রস্তাব মেনে নেই।’
রেজাউল ইসলাম মামুন আরো বলেন, ‘বিল উত্তোলন করে তাঁকে (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা) বিলের শতকরা হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দেই।

আবার এই তিনমাস হলো আমার কোনো বিলে স্বাক্ষর করেন না তিনি। গত ২৪ আগষ্ট তাঁর কাছে বিলের আবেদন করলে আবার টাকা দাবি করেন এবং আমি অপরগতা জানালে রেগে গিয়ে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করেন। বলেন, বিল কীভাবে নেন তা দেখব।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘লেনদেনের বিষয়টি সত্য আমি বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ওই টাকা দিয়েছি।’

বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ফার্মাসিষ্ট কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ‘যেদিন ঘটনাটি ঘটে ওইদিন আমি অফিসে কাজ করছিলাম। তখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমাকে নিজ কক্ষে ডাকেন এবং মামুন সাহেবের কাছে থেকে টাকাগুলো গুনে রাখতে বলেন। মামুন সাহেব চলে যাওয়ার পর, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওই টাকা আমার কাছে থেকে নিয়ে গেছেন। সেখানে ৫০০ টাকার নোটের একটি বান্ডিলে মোট ৫০ হাজার টাকা ছিল।’

ওই টাকা কোনো জরিমানা কিংবা হাসপাতালের তহবিলের কিনা জানতে চাইলে ফার্মাসিষ্ট কৃষ্ণ কুমার পাল বলেন, ‘ওই টাকা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে মামুন সাহেব দিয়েছেন, যা আমি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর স্যারের নির্দেশে গ্রহণ করেছি। ওই টাকাটা অন্য কোনো টাকা নয়, ওটা কমপ্লেক্সের পথ্য ও ষ্টেশনারি মালামাল কেনার ঠিকাদারের কাছে থেকে নেওয়া পার্সেন্টেজ।’

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাহমিদা লস্কর বলেন, ‘ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা মানসম্মত খাবার পরিবেশন করে না। আমি এ নিয়ে তাদের ডেকে মিটিং করে হুঁশিয়ারি দিয়েছি। আমি ঠিকাদারদের কাছে থেকে টাকা নেব কেন। আমি পরিস্কার, আমি ক্লিন। আর টাকা নিয়ে থাকলেও সেটি জরিমানা হতে পারে।’

জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা বাবাদ কোনো রিসিট দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ফাহমিদা লস্কর বলেন, ‘আদৌ মামুন সাহেব টাকা দিয়েছে কিনা আমি তো সেটাই জানি না। তাছাড়া আমাকে তো ভিডিওতে টাকা গুনতে দেখা যাচ্ছে। কৃষ্ণ টাকা গুনছে নাকি। সেটা তো আমাদের অফিসের টাকাও হতে পারে।’

বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুল হক বলেন, ‘ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে গত বুধবার বিকেলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সত্যতা পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ একই কথা বলেছেন বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল।
সর্বশেষ সংবাদ